সম্প্রতি আরমানিটোলা ও ফতুল্লায় দুটি অগ্নিকান্ডে বহু হতাহতসহ সম্পদের বিপুল ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এতে দৃশ্যমান হয়েছে যে, আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা কম। অগ্নি ও ভবন নিরাপত্তায় জনসচেতনতা বাড়াতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। ভয়ঙ্কর অগ্নিকান্ডের ঘটনা রাজধানী ঢাকার বহুতল ভবন থেকে শুরু করে বস্তি এলাকা পর্যন্ত সম্প্রসারিত এক অভাবনীয় দুর্যোগ। অথচ এসব এলাকায় আধুনিক আর প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির সহায়তায় অগ্নিদুর্যোগকে নিয়ন্ত্রণে আনার প্রযুক্তি সহায়ক নয়। অগ্নিনির্বাপণের প্রাসঙ্গিক সঙ্কেতসহ বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তিকে পুরো আয়োজনের অনুষঙ্গ করা আবশ্যক। বাংলাদেশের নিজস্ব অগ্নিনিরোধক দ্রব্যসামগ্রীকেও তার বহুল সম্ভারের আয়োজনে আরও আধুনিক করতে হবে। সঙ্গত কারণেই বিদেশী প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশে উৎপাদিত পণ্যের সাহায্যে ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনাকে প্রতিরোধ করা অত্যন্ত জরুরী। অগ্নিনির্বাপণ এবং নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানি করার চেয়ে বেশি নজর দেয়া আবশ্যক দেশেই এর উৎপাদন। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদা মোতাবেক অগ্নিনিরাপত্তার প্রস্তুতি প্রণয়ন ও তা জনগণের মাঝে সম্প্রসারণে উদ্যোগ নিতে পারে। এক্ষেত্রে নিক্ষেপযোগ্য ফায়ার বল আয়োজনের এক অন্যতম নিরাপত্তা ঘনিষ্ঠ পণ্য। এছাড়া আছে কোল্ড ফায়ার নামে অগ্নি প্রতিরোধ তরল, যা এক ধরনের গাছের পাতা থেকে তৈরি পানীয়, যাকে পরিবেশ সুরক্ষার অন্যতম সামগ্রী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরিবেশবান্ধব আধুনিক এই প্রযুক্তি অগ্নিদুর্ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশেষ সহায়ক। দেশীয় প্রযুক্তিতে সাজানো ফন গ্রুপের অগ্নিনির্বাপক সামগ্রীকে একটি ট্রাকে করে উপস্থিত সকলের সামনে উপস্থাপন করা হয়। এ ধরনের ট্রাক চট্টগ্রামের মেরিন একাডেমির কাছে বিক্রি করা হয় বলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এক প্রদর্শনীতে অগ্নিদুর্ঘটনায় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে সর্বাধুনিক উন্নত প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন রকমের অগ্নিনিরাপদ ক্ষুদ্র যন্ত্রও দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায়, রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অগ্নিদুর্ঘটনা যে মাত্রায় সংশ্লিষ্ট মানুষের জীবন আতঙ্কিত আর বিপর্যয় করে দেয় তার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় যাপিতজীবনের যে দুঃসহ চিত্র তা সত্যিই এক অনাকাক্সিক্ষত আর অনভিপ্রেত ঘটনা। সবচেয়ে অসহনীয় পরিস্থিতির সূত্রপাত ঘটে যখন কোন ভবন কিংবা বস্তিতে আগুন ধরে যায়। উপস্থিত সঙ্কট মোকাবেলার চেয়েও বেশি দৃশ্যমান হয় এই দাহ্য দুর্ঘটনাটি নিয়ে হরেকরকম অসংলগ্ন আলোচনা। আসলে আগুন লাগার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক উপস্থিত বুদ্ধিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়াই জরুরী হয়ে পড়ে। এমন দুঃসহ মুহূর্তে কিছু মানুষের যুক্তি বুদ্ধি ও ক্ষমতা লোপ পেতে থাকে। ফলে আগুন নেভানোর চেয়েও এ নিয়ে গুজব রটাতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। তবে আধুনিক ভারি প্রযুক্তি থেকে ক্ষুদ্র হাল্কা যন্ত্রও অগ্নিনির্বাপক সহায়ক দ্রব্য হিসেবে সহায়তা করে থাকে। সুতরাং সবার উচিত হবে সাধ্য ও প্রয়োজনমতো এমন সব নিরাপদ পণ্যসামগ্রীকে আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে বৃহত্তর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও রাখার ব্যবস্থা করা সচেতন দায়বদ্ধতা। দুর্ঘটনা-দুর্বিপাক মোকাবেলা করেই মানুষের জীবন চলে। ফলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও সবার হাতের নাগালে থাকলে পরিস্থিতি সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয় না।
Leave a Reply