করোনাকালে মানুষের ক্ষতি হয়েছে নানামাত্রিক। বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত অক্সফাম ও সিপিডির জরিপে দেখা যাচ্ছে, গত পনেরো মাসে দেশের ৬২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন, ৮৬ শতাংশ মানুষের আয় কমে গেছে এবং ৭৮ শতাংশ মানুষ তাদের খরচ কমিয়েছেন। একই জরিপে দেখা যাচ্ছে, দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ তাদের খাওয়া কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন- এরও কারণ অবশ্যই অর্থনৈতিক এবং মূল দায় করোনার। যে তথ্য এসব পরিসংখ্যানে উঠে আসেনি তা হলো সমাজের মধ্য ও নিম্নআয়ের মানুষের ব্যক্তিগত ঋণ বৃদ্ধির খবর। বিভিন্ন জরিপে সমাজের ভিন্ন ভিন্ন খাতের মানুষের আর্থিক দুর্দশার চিত্রও উঠে আসে। করোনার অভিঘাত দিনমজুর থেকে সর্বস্তরের চাকরিজীবীর ওপরই পড়েছে। বলাই বাহুল্য সরকারি চাকরিতে এখনো বেতন-ভাতা ঠিকভাবেই চলছে, তা ছাড়া করোনার আঘাত নেমে আসার আগেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু বেসরকারি খাতে কর্মরত জনগোষ্ঠী এ ধরনের কোনো সুরক্ষা জালের মধ্যে না থাকায় তারা নিদারুণ কষ্টে পড়েছেন। এও বোঝা যাচ্ছে, করোনা অতিমারীর আঘাত কবে নাগাদ কাটবে তা কারও পক্ষেই বলা সম্ভব হচ্ছে না। গত বছর বার্ষিক বাজেট প্রণয়নের সময় কর্মকর্তারা ধারণা করেছিলেন সে বছরের মধ্যেই করোনার প্রভাব কেটে যাবে এবং অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু বাস্তবে সে আশাবাদের প্রতিফলন ঘটেনি। করোনার প্রথম ঢেউ কাটার পর যখন সামান্য হাঁফ ছাড়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছিল তখনই, মাসখানেক পরেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানতে শুরু করে। এখন মাসখানেকের কঠিন সংগ্রাম শেষে আবার যেন করোনা সংক্রমণ স্তিমিত হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তবে পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমাদের সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই। ইউরোপে করোনার তৃতীয় ঢেউও এসেছে, তার পর তারা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টায় রয়েছে। তাদের স্বাভাবিকতায় ফেরার এই আত্মবিশ্বাসের পেছনে অবশ্য কাজ করছে করোনার প্রতিষেধক টিকার সুলভ প্রাপ্যতা। ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার টিকাদান সম্পন্ন হয়েছে। সে তুলনায় এশিয়ায় তা ১০ শতাংশের নিচে আর আফ্রিকায় ২ শতাংশের নিচে। এখন বিজ্ঞানীরা মনে করছেন করোনার প্রভাব থেকে বাঁচার একমাত্র পথ হলো জনগণকে এর টিকার আওতায় আনা। বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলায় তুলনামূলকভাবে উন্নত দেশ বা প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে ভালো করলেও টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রগতি ও প্রস্তুতি আশানুরূপ নয়। বলা বাহুল্য টিকার জন্য এককভাবে ভারতের ওপর নির্ভর করে থাকা ঠিক হয়নি। এ উপলব্ধিতে পৌঁছতে দেরি হওয়ায় এখন প্রয়োজনীয় টিকার ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা মনে করি বাংলাদেশকে নিজস্ব টিকা তৈরির পথেই এগোতে হবে। এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও উন্নত বন্ধুরাষ্ট্রের সহায়তা নিতে হবে।
Leave a Reply