যতই দিন যাচ্ছে দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বজ্রপাতে বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ২৫০ থেকে ৩৫০ জনের মৃত্যু হয়। গত কয়েক দশকের পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা গেছে, বিশ্বে বজ্রপাতের কারণে যত মানুষের মৃত্যু হয় তার চারভাগের একভাগ মানুষের মৃত্যু হয় বাংলাদেশে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই এক দশকে দেশে বজ্রপাতে প্রাণহানি ঘটেছে ২ হাজার ৮১ জনের। বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় ২০১৬ সালে সরকার বজ্রপাতকে ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে বজ্রপাত রোধে নেওয়া হয় বিশেষ পরিকল্পনা ও সতর্কীকরণ কর্মসূচি। কিন্তু মৃত্যুর মিছিল তাতে থামানো যায়নি। প্রাক-বর্ষা মৌসুম শুরুর এ সময় থেকে কৃষক ও জেলেদের কপালে দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা যায়। বজ্রপাত বৃদ্ধির কারণের কথা বললেই প্রথমেই আসবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা। তাছাড়া পরিবেশ দূষণ, বৃক্ষসম্পদ ধ্বংস, নদনদী শুকিয়ে যাওয়া, জলাভূমি ভরাট হওয়াসহ বিভিন্ন কারণ তো রয়েছেই। বায়ুমন্ডলে তাপমাত্রা বাড়ার ফলে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। আবহাওয়ার এমন অনভিপ্রেত পরিবর্তন বজ্রসহ ঝড়বৃষ্টির জন্য বেশি দায়ী। মে-জুন মাসে ঝড়বৃষ্টিসহ বজ্রপাত বেশি দেখা যায়। কেননা, এ সময় বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা আর্দ্র বায়ু আর উত্তরের হিমালয় থেকে আসা শুষ্ক বায়ুর মিলনে ব্যাপক বজ্রঝড়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাতে মৃত্যুর মিছিল লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এটাকে দুর্যোগ ঘোষণার পর জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ২০১৭ সাল থেকে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার; তার একটি হচ্ছে তালগাছ রোপণ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সরকার বজ্রপাত রোধে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ২৮ লাখ তালগাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছে এবং তা বাস্তবায়নও হচ্ছে। বজ্রপাতে প্রাণহানি কমাতে তালগাছ লাগানো একটা ভালো সমাধান। তবে এটা বেশ সময়সাপেক্ষ ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। প্রযুক্তিগত সহায়তার কথা এ ক্ষেত্রে ভাবা যেতে পারে। যেহেতু তালগাছ বড় হতে সময় লাগে, সেহেতু দ্রুত লম্বা হয় এমন বড় গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। সর্বত্র তালগাছের সংখ্যা বাড়লে বজ্রপাত সেখানেই হবে, ফলে এড়ানো যাবে প্রাণহানি। দেখা যায়, বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগ মাঠে খেটে খাওয়া সাধারণ চাষি গেরস্ত। বজ্রপাত থেকে তাদের রক্ষা করতে হলে মাঠের মাঝখানে বাবলা, হিজল, সুপারিসহ এ ধরনের গাছ লাগাতে হবে। মাঠের মাঝখানে খাম্বা বসিয়ে তাতে আর্থিং করলে বজ্রপাতে প্রাণহানি কমবে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাও জরুরি। ভূমিকম্পের মতো বজ্রপাতের সময় মানুষের কী কী করা উচিত, সে বিষয়ে নির্দেশনা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কমিউনিটি রেডিওকে ব্যবহার করা যেতে পারে। সরকার বজ্রপাতের আগাম সংকেত দেওয়াসহ প্রযুক্তিনির্ভর আরও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা চাই, এসব পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক। সরকারের পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগই কেবল পারে দেশের জনসাধারণকে বজ্রপাত থেকে রক্ষা করতে।
Leave a Reply