একজন নারী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদককে দায়িত্ব পালনকালে যেভাবে সচিবালয়ে আটকে রেখে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা হেনস্তার পর অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মধ্যরাতে আটক করা হয়েছে, তা একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য সঠিক আচরণ নয়। এ ঘটনার আগে সংশ্লিষ্ট সংবাদকর্মী রোজিনা ইসলাম তার পত্রিকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নানা দুর্নীতি নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি খবর- শিরোনাম ‘এখন কোটি দেব, পরে আরও দেব’ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সর্বোচ্চ মহলে আলোড়ন তুলেছিল। অনেকেরই ধারণা- তাকে সোমবার এই মন্ত্রণালয়ে এভাবে হেনস্তা ও মামলায় বন্দি করার পেছনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষোভ যে কাজ করছিল, তা অস্পষ্ট নয়। আমরা আশা করব, সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় ও আদালত বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি এবং দুর্নীতি ও সাংবাদিক নির্যাতনের মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। আলোচ্য অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বহু পুরনো আইন। ১৯২৩ সালে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকার এটি নিজেদের লুণ্ঠনকর্ম গোপন রাখা ও দেশীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শায়েস্তা করার কাজে ব্যবহার করত। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বহু সংগ্রামের পর একটি গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থায় রয়েছে। এখন সব মহলের কাম্য হচ্ছে একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন এবং শাসনব্যবস্থায় সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। এ কারণেই দেশে তথ্য অধিকার আইন ও একটি স্বাধীন তথ্য কমিশনও রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের একটি ধারাও তৈরি হয়েছে এবং আলোচ্য সাংবাদিক এতে একজন পারদর্শী ব্যক্তি। তিনি ইতোমধ্যে তার সাহসী সত্যসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য একাধিক আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। আমরা জানি, আমাদের আমলাতন্ত্র পুরনো ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণায় কর্তৃত্ববাদী অবস্থানেই রয়েছে। আর এই সুযোগে কেউ কেউ দুর্নীতি, ক্ষমতার অপপ্রয়োগে এখনো অভ্যস্ত। ফলে তাদেরই ইন্ধন এবং তাদের সঙ্গে একশ্রেণির দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকের যোগসাজশে দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও তথ্যপ্রাপ্তির পথে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এরই অংশ এ আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। সাংবাদিকরা দীর্ঘদিন ধরে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। সাংবাদিক রোজিনার সাম্প্রতিক ঘটনার পর স্বাধীন সাংবাদিকতার আন্দোলন আরও জোরদারভাবে চালানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে বলব- সাংবাদিক সমাজের বিভক্তি যেমন কাম্য নয়, তেমনি তাদের স্বাধীন নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখাও জরুরি। তা হলেই সচেতন জনগণের সুস্পষ্ট সমর্থন তারা ভোগ করবেন এবং সর্বমহলে মর্যাদার আসনও বজায় থাকবে। আমরা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও নির্যাতনের সুবিচার প্রত্যাশা করি এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে যথাযথ নির্দেশনাও কামনা করি। এ ছাড়া জোর দাবি জানাব- ঔপনিবেশিক অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বাতিল ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করা হোক।
Leave a Reply