অনেক ভেবেচিন্তে শেষ পর্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে সরকার। দেশেই তৈরি করবে করোনা ভ্যাকসিনÑ হন্তারক ভয়ঙ্কর সংক্রামক ব্যাধি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে। এই নিয়ে আপাতত চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ইতিবাচক আলাপ-আলোচনা চলমান। টিকার ফর্মুলা গোপনীয় রাখার শর্তে দেশেই উৎপাদিত হবে করোনার টিকা। এমনকি ভারতের সহযোগিতায় অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা তৈরির প্রস্তাবও রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো খোঁজ-খবর নিয়ে দেখেছে যে, এই মুহূর্তে দেশের অন্তত চারটি ওষুধ কোম্পানির টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, ফর্মুলা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পেলে প্রতিমাসে প্রায় ৫ কোটি ডোজ করোনার টিকা তৈরি সম্ভব দেশেই। তাহলে আর টিকার জন্য বিদেশনির্ভর তথা পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প প্রায় স্বনির্ভর এবং ৯৮ শতাংশ ওষুধ উৎপাদিত হয় দেশেই। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশে রফতানিও হচ্ছে দেশীয় ওষুধ। সেক্ষেত্রে করোনার টিকা উৎপাদনও দেশেই সম্ভব। যথাযথ প্রস্তুতি ও উদ্যোগ নিলে যা তৈরি হয়ে বাজারজাত হতে পারে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে। এমনকি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রফতানিও করা যেতে পারে বিদেশে। এর পাশাপাশি আশার খবরও আছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং টিকা সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে করোনা টিকার মেধাস্বত্ব উন্মুক্ত করে দেয়ার বৈশ্বিক আবেদনে ইতিবাচক সম্মতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অতঃপর আশা করা যায় যে, কিছু সময় লাগলেও খুব শীঘ্রই করোনা টিকার মেধাস্বত্ব উন্মুক্ত হবে এবং সে অবস্থায় টিকা তৈরি করতে পারবে বাংলাদেশও। ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে সেরাম ইনস্টিটিউট লিখিত চুক্তিসহ অর্থ পরিশোধ সত্ত্বেও এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা যথাসময়ে না দেয়ায় বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এমনকি সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে গোপনীয়তা রক্ষা শর্তে দেশেই টিকা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনও মিলেছে। জরুরী ব্যবহারের জন্য ইতোমধ্যে রাশিয়ার তৈরি স্পুটনিক টিকা অনুমোদন ও আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে। সরকার টু সরকার পদ্ধতিতে চলতি মাসের মধ্যে রাশিয়া থেকে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ ডোজ টিকা দেশে আসার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। করোনার বিরুদ্ধে এই টিকার কার্যকারিতা ৯১ শতাংশ। অন্যদিকে চীনের সঙ্গেও চলেছে আলোচনা। এর পাশাপাশি চেষ্টা চলছে মেডিক্যাল অক্সিজেনসহ আনুষঙ্গিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহের। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোপূর্বে জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে করোনার টিকা বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন, যেটি যথার্থ ও সময়োপযোগী। তবে দুঃখজনক হলো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ট্রিপস চুক্তির আওতায় টিকা মেধা সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও দাম নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। ফলে সারাবিশ্বে টিকার সুষম বণ্টন ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ হচ্ছে না। টিকা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উন্নয়নশীল ও গরিব দেশগুলো। এই মুহূর্তে অন্তত এক শ’ কোটি ডোজ টিকা কিনে নিয়েছে বিশ্বের ৩টি উন্নত দেশ। ফলে বাকি দেশগুলোতে দেখা দিয়েছে টিকার জন্য হাহাকার, যা কাম্য নয় কোন অবস্থাতেই। বাংলাদেশে বিনামূল্যে টিকা সরবরাহ ও প্রয়োগ করা হচ্ছে সরকারী ব্যবস্থানায় সারাদেশে। এর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ২৬ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবেলার জন্য তৈরি হয়েছে নির্দেশিকা। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিশেষ সাফল্য রয়েছে, যার স্বীকৃতি মিলেছে জাতিসংঘ বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক। বাংলাদেশ যথাসময়ে ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকাদানের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনে সক্ষম হবে বলে প্রত্যাশা। আপাতত বিদেশ থেকে টিকা সংগ্রহের পাশাপাশি দেশেই টিকা তৈরির সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। গ্লোব বায়োটেকের টিকাটি নিয়েও অগ্রসর হওয়া যেতে পারে।
Leave a Reply