স্বাভাবিকভাবেই মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির বিষয়টি ইতিবাচক। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, মাথাপিছু আয়ে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেল প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতকে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসাবে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ২২৭ ডলার। অন্যদিকে সবশেষ হিসাবে ভারতের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯৪৭ ডলার। আমরা বলতে চাই, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এই বিষয়টি যেমন ইতিবাচক, তেমনি অগ্রগতির এই ধারা বজায় রাখতে সামগ্রিক পদক্ষেপ জারি রাখতে হবে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) একজন সাবেক গবেষণা পরিচালক বলেছেন, দুটি কারণে দেশে মাথাপিছু আয় বেড়েছে। একটি কারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। আরেকটি হচ্ছে ডলারের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে, তাই ডলারের হিসাবে জাতীয় আয় বেড়েছে। উলেস্নখ্য, এর আগে গত বছরের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে আভাস দেওয়া হয়েছিল, ২০২০ সালে চলতি বাজারমূল্যে মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ১ হাজার ৮৮৮ ডলারে পৌঁছাবে। অন্যদিকে ভারতে এটি কমে হবে ১ হাজার ৮৭৭ ডলার। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বাংলাদেশ ও ভারতে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। সম্প্রতি পরিকল্পনামন্ত্রী পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসাব তুলে ধরে জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় গত অর্থবছরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া গত অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ ছিল ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা বেড়ে হয়েছে ৩০ লাখ ৮৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আমরা মনে করি, মাথাপিছু বৃদ্ধি সংক্রান্ত যে বিষয়গুলো উঠে আসছে তা আশাব্যঞ্জক। এখন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, এই অর্জনকে ধরে রাখতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সঠিক বাস্তবায়নে কাজ করা। এ ছাড়া মনে রাখা দরকার. মাথাপিছু আয় জিডিপি বৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবেই আশাপ্রদ হলেও প্রকট বৈষম্যের এ সমাজে মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির সুফল সবাই পাচ্ছেন কিনা, সেটাও বড় প্রশ্ন। যা আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের এটা আমলে নেওয়া দরকার, এর আগে বিশ্লেষকদের এমন মত উঠে এসেছিল, মাথাপিছু আয় বাড়লেও ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। ধনীরা সম্পদের পাহাড় গড়লেও সুযোগ-সুবিধার অভাবে দরিদ্ররা দরিদ্রই থেকে যাচ্ছে। ফলে এই দিকটিকে সামনে রেখে উদ্যোগী হতে হবে। কেননা সামাজিক বৈষম্যের এই দুষ্টচক্র ভাঙতে না পারলে সংকট আরও তীব্র হতে পারে, এমন সতকর্তাও রয়েছে বিশ্লেষকদের। একদিকে দারিদ্র্য কমছে, অন্যদিকে ধনী-গরিবের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়ছে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা খুবই উদ্বেগের বিষয়। এটা মনে রাখা দরকার, মূলত সম্পদের অসম বণ্টন এবং অবৈধ আয়ের উৎসের কারণে আয় বৈষম্য প্রকট হচ্ছে, এমন বিষয় বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছে। যেহেতু মাথাপিছু আয়ের ঊর্ধ্বগতির সুফল সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়ার প্রতি জোর দিয়েছেন বিশ্লেষকরা- ফলে এটি যেমন আমলে নিতে হবে তেমনি ঘুষ, দুর্নীতি, কর ফাঁকির মতো বিষয়গুলো কঠোরভাবে প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রেও কাজ করতে হবে। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত যেভাবে ঘুষ-দুর্নীতি বিষয়ে নানা ধরনের খবর সামনে আসে, তা বৈষম্য নিসরনের জন্য প্রতিবন্ধক- ফলে এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, মাথাপিছু আয়ে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেল প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতকে- এটি ইতিবাচক। এখন অথর্নীতির ক্ষেত্রগুলোতে উন্নতির ধারা বজায় রাখতে উদ্যোগও অব্যাহত রাখতে হবে। মাথাপিছু বৃদ্ধির মতো ইতিবাচক বিষয়কে আমলে নিয়ে বৈষম্য নিরসনেও কাজ করতে হবে। বৈষম্য নিরসন সম্ভব হলেই মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির শতভাগ সুফল দেশবাসী পেতে পারে; যা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
Leave a Reply