করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তেমন কোনো সফলতা নেই। ইউরোপ ও আমেরিকার পর করোনার পরবর্তী ভরকেন্দ্র হতে চলেছে দক্ষিণ এশিয়া। বিশ্ব যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের দিকে নজর রেখেছে, তখন দক্ষিণ এশিয়ায় ঘটে যাচ্ছে বেদনাদায়ক ঘটনাপ্রবাহ। মানবিক বিপর্যয় আমাদের ঘাড়ের ওপর। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে ভারত। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। এর পরই পাকিস্তান। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই লাখ। প্রায় দুই লাখ আক্রান্ত হওয়ায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রেড ক্রিসেন্টের এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান জন ফ্লেমিং। তিনি বলেছেন, ‘আগামী মাসগুলো ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ায় করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আরো বাড়বে।’
এ দিকে ভারতের কর্নাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে ভারতে ১ সেপ্টেম্বর সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ৩৫ লাখ হতে পারে। মৃতের সংখ্যা হতে পারে এক লাখ ৪১ হাজার। পয়লা অক্টোবর সংক্রমিতের সংখ্যা হতে পারে ৬৮ লাখ, মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ৮০ হাজার। পয়লা ডিসেম্বর সংক্রমিতের সংখ্যা হতে পারে এক কোটি ৯৩ লাখ, মৃতের সংখ্যা আট লাখ ৩৬ হাজার। পয়লা জানুয়ারি সংক্রমিতের সংখ্যা হতে পারে দুই কোটি ৯৬ লাখ, মৃতের সংখ্যা ১৩ লাখ এক হাজার। পশ্চিমবঙ্গেও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। পয়লা সেপ্টেম্বর নাগাদ রাজ্যে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার হতে পারে। মারা যেতে পারে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। পূজার সময় ২২ অক্টোবর সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়াতে পারে। আগামী বছরের পয়লা জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমিতের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ হতে পারে। মৃতের সংখ্যা হতে পারে ২২ হাজার। ভারতের জন্য আতঙ্কের খবর হলোÑ গ্রামীণ এলাকাগুলোতে করোনার বিস্তার ঘটছে আশঙ্কাজনক হারে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বেশ কিছু রাজ্য ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে লকডাউন-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ পুনর্বহাল করেছে। উত্তর ভারতের বিহার রাজ্যে গত বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে লকডাউন জারি করা হয়েছে। এর আগে লকডাউন শিথিল হলে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক রাজ্যে ফিরতে শুরু করে এবং সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। দেশটির অনেক রাজ্যের গ্রামীণ এলাকাগুলোতে সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে। যখন থেকে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে তখন থেকেই দেশটিতে চলছে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় দুই লাখে। গত শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত আরো ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাতে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৫৪৭ জন। গত এক দিনে আরো তিন হাজার ৩৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৯৯ হাজার ৩৫৭ জনে। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন এক লাখ আট হাজার ৭২৫ জন। বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে ২০ শতাংশের বেশি বা এক-চতুর্থাংশের মৃত্যু ঘটছে, যা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা কতটা সফল তা এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট।
পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটছে এবং মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। এ দিকে লকডাউন শিথিল করেও অর্থনীতির চাকা পুরোপুরি সচল করা গেছে এমনও নয়। করোনা আক্রান্ত হয়ে একের পর এক বিশিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় দেশে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কার্যত কেউ কোনো কাজে মনোসংযোগ করতে পারছেন না। অর্থনৈতিক দুরবস্থা প্রতিনিয়ত মানুষকে গ্রাস করছে। করোনা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে দেশে যে অব্যবস্থাপনা দেখা যাচ্ছে তাতে মানুষ আশা ধরে রাখার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। খবর পাওয়া যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সেক্টরের জন্য যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিলেন, ব্যাংকগুলো সেই অর্থের খুব সামান্যই ছাড় করেছে। এর অর্থ হলোÑ গার্মেন্ট খাত ছাড়া অন্য খাতের অংশীরা প্রণোদনার অর্থ পাননি। সব মিলিয়ে দেশ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি বলেই মনে হয়।
Leave a Reply